বহুব্রীহি সমাস ও দ্বিগু সমাস সম্পর্কে আলোচনা

                                                             বহুব্রীহি সমাস

                                                                       

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে ,অন্য কোন পদকে বোঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে ।যেমন- বহু ব্রীহি(ধান ) আছে যার =বহুব্রীহি। এখানে বহু ও ব্রীহি কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে ,বহু ধান আছে এমন লোককে বোঝাচ্ছে।এ সমাসের সাধারণত ব্যাসবাক্য যার,যাতে।যেমন:নীল বসন যার=নীলবসনা,।এরূপ - স্বচ্ছসলিলা,স্থিরপ্রতিজ্ঞ,ধীরবুদ্ধি,মহাত্মা ইত্যাদি।


  • সহ বা সহিত শব্দের সঙ্গে অন্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে সহ’ বা ‘সহিত’ এর স্থলে ‘স’ হয়্।যেমন-বান্ধবসহ বর্তমান=সবান্ধব।এরূপ - সহোদর,সজল,সফল,সদর্প,সলজ্জ,সকল্যাণ ইত্যাদি।
  • এ সমাসে পরপদে ‘জায়া ‘শব্দ স্থানে ’জানি’ হয় এবং পূর্বপদের কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়।যেমন-যুবতী জায়া যার=যুবজানি ( যুবতী স্থলে যুব এবং জায়া স্থলে জানি হয়েছে।

  • এ সমাসে পরপদে মাতৃ,পত্নী,পুত্র,স্ত্রী শব্দ থাকলে এই শব্দগুলোর সাথে ‘ক’ যুক্ত হয়।যেমন-নদী মাতা যার=নদীমাতৃক। এরূপ - বিপত্নীক,অপুত্রক,সস্ত্রীক ইত্যাদি।

  • বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদে অক্ষি’শব্দের স্থলে অক্ষ’এবং নাভি’শব্দের স্থলে’নাভ’হয়।যেমন-পদ্ম নাভিতে যার=পদ্মনাভ।এরূপ-ঊর্ণনাভ,কমলাক্ষ ইত্যাদি।

  • এ সমাসে পরপদে চূড়া’ শব্দ সমস্ত পদে ‘চূড়’এবং’কর্ম’শব্দ সমস্ত পদে ‘কর্মা’হয়।যেমন-চন্দ্র চূড়া যার=চন্দ্রচূড়,বিচিত্র কর্ম যার =বিচিত্রকর্মা।

  • এছাড়া ‘সমান’ শব্দের স্থানে ‘’এবং’সহ’ এবং গন্ধ’ শব্দ স্থলে ‘গন্ধি’বা ‘গন্ধা’ হয়।যেমন - সমান যে কর্মী=সহকর্মী ,সমান বর্ণ যার সমবর্ণ এরূপ,সহোদর এবং সুগন্ধ যার =সুগন্ধি,পদ্মের ন্যায় গন্ধ যার = পদ্মগন্ধি,।এরূপ- মৎস্যগন্ধা।


প্রকারভেদ:
              বহুব্রীহি সমাস আট প্রকার:
                                                 ১.সমানাধিকরণ বহুব্রীহি:
                                                 ২.ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি:
                                                 ৩.ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস:
                                                 ৪.নঞ বহুব্রীহি সমাস:
                                                 ৫.মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস:
                                                 ৬.প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি সমাস:
                                                 ৭.অলুক বহুব্রীহি সমাস:
                                                 ৮.সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস: 

১.সমানাধিকরণ বহুব্রীহি:পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়।যেমন-হত হয়েছে শ্রী যার=হতশ্রী,খোশ মেজাজ যার=খোশমেজাজ।এরূপ-হৃতসর্বস্ব,পীতাম্বর,জবরদস্তি,সুশীল,নীলকণ্ঠ,সুশ্রী,কমবখ্ত,বদবখত,উচ্চশির।

২.ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি: যে বহুব্রীহি সামাসে পূর্বপদ এবং পরপদ কোনটিই বিশেষণ না হয় তাকে সমাস বলে।যথা:আশীতে বিষ যার = আশীবিষ,কথা সর্বস্ব যার = কথাসর্বস্ব ।
***পরপদ কৃদন্ত বিশেষণ হলেও এ সমাস হয় ।যথা -দুই কান কাটা যার=দু কানকাটা,বোঁটা খসেছে যার=বোঁটা খসা।
অনুরূপভাবে-ছা-পোষা,পা-চাটা,পাতাছেঁড়া,পাতা-চাটা,ধামাধরা ইত্যাদি।

৩.ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস:ক্রিয়ার পারস্পারিক অর্থে এ সমাস হয়।এ সমাসে পূর্বপদে আ’ এবং উত্তর পদে ‘ই’যুক্ত হয়।যথা-হাতে হাতে যে যুদ্ধ= হাতাহাতি,কানে কানে যে কথা =কানাকানি।এরূপ-কাড়াকাড়ি,গালাগালি,কোলাকুলি,দেখাদেখি,হাসাহাসি,লাঠালাঠি,ঘুষাঘুষি,গুঁতাগুঁতি,চুলাচুলি  ইত্যাদি।

৪.নঞ বহুব্রীহি সমাস:বিশেষ্য পূর্বপদের আগে নঞ (না অর্থবোধক) অব্যয় যোগ করে যে বহুব্রীহি সমাস হয় তাকে নঞ বহুব্রীহি সমাস বলে।এ সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয় ।যেমন - ন(নাই)জ্ঞান যার=অজ্ঞান,
বে (নাই ) হেড যার =বেহেড।এরূপ - নাচার,নির্ভুল,নাজানা বা অজানা,নাহক,নিরুপায়,নির্ঝঞ্ঝাট,অবুঝ,অকেজো,বে-পরোয়া,বেহুঁশ,অনন্ত,বেতার ইত্যাদি।

৫.মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস:যে বহুব্রীহি সমাসের ব্যাক্ষাংশের মধ্যপদ লোপ পায় তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস বলে।যেমন - বিড়ালের চোখের মত চোখ যে নারীর=বিড়ালচোখী,হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে=হাতেখড়ি।
এরূপ-গায়েহলুদ,মেনিমুখো ইত্যাদি।

৬.প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি সমাস:যে সমাসের সমস্তপদে আ,এ,ও প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি সমাস বলে।যথা-এক দিকে চোখ যার =একচোখা (চোখ +আ),ঘরের দিকে মুখ যার=ঘরমুখো (মুখ+ও),নেই খরচ যার=নি-খরচে (খরচ+এ)। এরূপ - দোমনা,দোটানা,একগুঁয়ে,একঘরে,অকেজো,দোনলা,দোতলা,ঊনপাঁজুরে ইত্যাদি।

৭.অলুক বহুব্রীহি সমাস:যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের কোন পরিবর্তন হয় না তাকে অলুক বহুব্রীহি সমাস বলে।এ সমাসে সমস্ত পদটি বিশেষণ হয়।যথা-মাথায় পাগড়ি যার=মাথায়পাগড়ি,গলায় গামছা যার=গলায়গামছা (লোকটিকে বুঝানো হয়েছে)  ইত্যাদি।এরকম-কানে-কলম,হাতে-ছড়ি,হাতে-বেড়ি,গায়ে-পড়া,মাথায়-ছাতা,মুখে-ভাত,কানে-খাটো ইত্যাদি।

৮.সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস: পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্ত পদটি বিশেষণ বোঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলে। এ সমস্ত পদে ‘আ,ই,ঈ যুক্ত হয় । যথা-দশ গজ পরিমাণ যার=দশগজি,চৌ (চার) চাল যে ঘরের=চৌচালা।এরূপ - চারহাতি,তেপায়া ইত্যাদি

***কিন্তু ,সে (তিন) তার (যে যন্ত্রের) = সেতার (বিশেষ্য)।

****নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি: এ সমাস কোন নিয়মের অধীনে নয় ।যেমন: দু দিকে অপ যার দ্বীপ,অন্তর্গত অপ যার=অন্তরীপ, নরাকারের পশু যে = নরপশু, জীবিত থেকেও যে মৃত =জীবন্মৃত, পণ্ডিত হয়েও যে মূর্খ=পণ্ডিতমূর্খ।






                                                                  দ্বিগু সমাস

সমাহার (সমষ্টি) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সংঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়,তাকে দ্বিগু সমাস বলে।এ সমাসে সমস্ত পদটি বিশেষ্য পদ হয়।যেমন- তিন কালের সমাহার = ত্রিকাল, চৌরাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা, ত্রি পদের সমাহার = ত্রিপদী।এরকম - শতাব্দী,তেমাথা,পঞ্চবটী,চতুর্ভুজ,অষ্টধাতু, ত্রিমোহিনী,তেরনদী,পঞ্চভূত,সাতসমুদ্র,চতুরঙ্গ ইত্যাদি।


দিগু সমাস নিযে বেশি আলোচনার কিছু নেই । এটি খুবই সহজ সমাস । সবাই খুব সহজেই বুঝতে ও শিখতে পারে।





1 comment:

Powered by Blogger.